প্রতি প্রশ্নের নাম ১ এবং প্রতি ভুল উত্তরের জন্য .২৫ নম্বর কাটা হবে।
1. ড. সুকুমার সেনের মতে চর্যাপদের রচনাকাল
চর্যাপদ বাংলা ভাষার প্রাচীনতম পদ সংকলন তথা সাহিত্য নিদর্শন।
চর্যাপদের রচনা কাল :
বাংলা সাহিত্যের আদি গ্রন্থ ' চর্যাপদ' - এর রচনাকাল নিয়ে মতভেদ রয়েছে। ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর মতে, চর্যাপদের রচনা কাল সপ্তম থেকে দ্বাদশ শতাব্দীর মধ্যে (৬৫০ থেকে ১২০০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে)।
অপরদিকে, ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়য়ের মতে, চর্যাপদের রচনাকাল দশম থেকে দ্বাদশ শতক (৯৫০ থেকে ১২০০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে)।
সুকুমার সেনসহ বাংলা সাহিত্যের প্রায় সব পণ্ডিতই সুনীতিকুমারের মতামতকে সমর্থন করেছেন।
2. সাধনা পত্রিকার প্রথম সম্পাদক
সুধীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৩ জুলাই ১৮৬৯– ৭ নভেম্বর ১৯২৯) ছিলেন একজন ভারতীয় বাঙালী কবি, ঔপন্যাসিক ও গল্পকার। তিনি কলকাতার বিখ্যাত ঠাকুর পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।
১৮৯১ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভ্রাতুষ্পুত্র সুধীন্দ্রনাথ ঠাকুর সম্পাদনায় পত্রিকাটি প্রথম প্রকাশ ঘটে। তিনিই ছিলেন এই পত্রিকার সম্পাদক। সুধীন্দ্রনাথ ঠাকুর কবিতা, উপন্যাস ও ছোটোগল্প রচনা করে গিয়েছেন।
সাধনা প্রথম প্রকাশিত হয় ১২৯৮ বঙ্গাব্দের অগ্রহায়ণ মাসে (ডিসেম্বর, ১৮৯১)।
চতুর্থ বছর সম্পাদনার ভার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নিজেই গ্রহণ করেন।
এই পত্রিকার প্রধান লেখক ছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নিজেই।
3. গোবিন্দদাস রচিত সংস্কৃত নাটক
গোবিন্দদাস কবিরাজ (১৫৩৫ - ১৬১৩) হলেন বাংলা বৈষ্ণব পদাবলীর একজন বিখ্যাত পদকর্তা। তিনি চৈতন্য-উত্তর বৈষ্ণব পদাবলী সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ কবি।
গোবিন্দদাস রচিত সংস্কৃত নাটকের নাম ‘সংগীতমাধব’।
গোবিন্দদাসের আসল পদবি সেন।
বিদ্যাপতির ভাবশিষ্য ছিলেন গোবিন্দদাস।
গোবিন্দদাসের নামে প্রায় সাড়ে চারশত বৈষ্ণবপদ পাওয়া যায়।
মিথিলার কবি বিদ্যাপতি ছিলেন গোবিন্দদাসের কাব্যগুরু।
শ্রীজীব গোস্বামী গোবিন্দদাসকে ‘কবিরাজ’ উপাধি দেন।
জীব গোস্বামী গোবিন্দদাসকে ‘কবীন্দ্র’ উপাধিও প্রদান করেন।
ভাদেপা:
- তিনি খ্রিষ্টীয় অষ্টম শতকে ছিলো।
- তিনি শ্রাবন্তী এলাকায় অবস্থান ছিলো।
- ভাদেপা'র গুরু ছিলো জালন্ধরীপা, মতান্তরে কাহ্নপা।
- চর্যাপদের ৩৫ নং পদ রচনা করেন।
উৎস: বাংলা ভাষা ও সাহিত্য জিজ্ঞাসা, ড. সৌমিত্র শেখর।
5. কোথা থেকে প্রথম চর্যাপদ প্রকাশিত হয়?
চর্যাপদ বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের আদি নিদর্শন। ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী নেপাল রাজদরবারের গ্রন্থাগার থেকে এর পুথি আবিষ্কার করেন।
বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের সাহায্যে ১৯১৬ সালে প্রকাশিত হাজার বছরের পুরাণ বাঙ্গালা ভাষায় রচিত বৌদ্ধ গান ও দোঁহা নামক গ্রন্থের চব্বিশ (মতান্তরে তেইশ) জন বৌদ্ধ সিদ্ধাচার্যের রচিত চর্য্যাচর্য্যর্বিনিশ্চয়ের সাড়ে ছেচল্লিশটি গান।
হরপ্রসাদ শাস্ত্রী তার সম্পাদিত হাজার বছরের পুরাণ বাঙ্গালা বৌদ্ধ গান ও দোহা গ্রন্থের ভূমিকায় চর্যাচর্যবিনিশ্চয়, সরহপাদ ও কৃষ্ণাচার্যের দোহা এবং ডাকার্ণব-কে সম্পূর্ণ প্রাচীন বাংলার নিদর্শন বলে দাবি করেছেন।
চর্যাপদের ভাষা অবিমিশ্র বাংলা নয়, কারণ চর্যার কবিগণ ছিলেন বিভিন্ন অঞ্চলের (যথা বাংলা, উড়িষ্যা, আসাম, বিহার)। বাংলাদেশের ভৌগোলিক সীমা তখন নানাদিকে প্রসারিত ছিল।
চর্যাপদের কবিরা হলেন সরহপা, শবরপা, লুইপা, ডোম্বীপা, ভুসুকুপা, কাহ্নপা, কুক্কুরীপা, মীনপা, আর্যদেব, ঢেণ্ঢনপা প্রমুখ। চর্যাপদে তত্ত্বের কথা থাকলেও এর সাহিত্যমূল্যও স্বীকৃত। কবিরা যুক্তিবাদী ও মননধর্মী হয়েও উপমা-রূপকের ব্যবহারে দক্ষ ছিলেন। তাঁদের রচনাশৈলী শিল্পসৌকর্যের অভিমুখী।
6. যে সবে বঙ্গেতে জন্মি হিংসে বঙ্গবাণী সে সব কাহার জন্ম নির্ণয় ন জানি। এটি কার রচনা?
যে সব বঙ্গেত জন্মি হিংসে বঙ্গবাণী।সে সব কাহার জন্ম নির্ণয় ন জানি।' - পঙ্ক্তিটির রচয়িতা আবদুল হাকিম।
- এই উক্তটি তিনি 'নূরনামা' কাব্যের অন্তর্গত 'বঙ্গবানী' কবিতায় লিখেছেন।তিনি তার রচিত নূরনামা কাব্যের জন্য অধিক পরিচিত। তিনি বেশ কিছু ফার্সি কবিতার বঙ্গানুবাদ করেন। তিনি ফার্সি, আরবি ও সংস্কৃৃত ভাষায় পণ্ডিত ছিলেন।
আবদুল হাকিম (১৬২০-১৬৯০) মধ্যযুগীয় বাংলা সাহিত্যের একজন কবি। নোয়াখালী জেলার বাবুপুর (মতান্তরে সন্দ্বীপের সুধারাম) ছিল কবির আবাসভূমি।
তার অন্যান্য উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ হলঃ
ইউসুফ-জুলেখা
নূরনামা
চারি মোকাম ভেদ
লালমতি
সয়ফুলমুলক
নসিহৎনামা
কারবালা ও শহরনামা
শাহাবুদ্দিননামা
দূররে মজলিস।
7. ব্রাহ্মসমাজের মুখপত্র ছিল
তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা ব্রাহ্মসমাজের তত্ত্ববোধিনী সভার মুখপত্র। ব্রাহ্মধর্মের প্রচার এবং তত্ত্ববোধিনী সভার সভ্যদের মধ্যে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষার উদ্দেশ্যে ১৮৪৩ সালের ১৬ আগস্ট অক্ষয়কুমার দত্তের সম্পাদনায় তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা প্রথম প্রকাশিত হয়। এর সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর।
উনিশ শতকের শ্রেষ্ঠ গদ্যলেখক ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, রাজনারায়ণ বসু, দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রমুখ এ পত্রিকায় নিয়মিত লিখতেন এবং তাঁদের লেখার মাধ্যমে তখন বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে এক নবযুগের সূচনা হয়।
তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা ১৯৩২ সাল পর্যন্ত প্রকাশিত হয়েছে৷ অক্ষয়কুমারের পরে বিভিন্ন সময়ে এর সম্পাদনার দায়িত্ব পালন করেন নবীনচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়, সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর, অযোধ্যানাথ পাকড়াশী, হেমচন্দ্র বিদ্যারত্ন, দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও ক্ষিতীন্দ্রনাথ ঠাকুর৷
8. বাংলা কবিগানের রচয়িতা এন্টনি ফিরঙ্গি জাতিতে কী ছিলেন?
এন্টনি ফিরিঙ্গি (?-১৮৩৬) কবিয়াল। প্রকৃত নাম হেনসম্যান এন্টনি (Hensman Anthony)। তিনি জাতিতে ছিলেন পর্তুগিজ এবং ধর্মে খ্রিস্টান। পশ্চিমবঙ্গের চন্দননগরের ফরাসডাঙায় তিনি বসবাস করতেন। তিনি কবিগানের জন্য বিখ্যাত ছিলেন।
র্তুগীজ নাগরিক হ্যান্সম্যান ১৯শতকের প্রথম দিকে বাংলাতে আসেন এবং পশ্চিমবঙ্গের ফরাসডাঙ্গা নামক এলাকায় বসবাস শুরু করেন। প্রথমে তার বাংলা গানগুলোর বাঁধনদার ছিলেন গোরক্ষনাথ, পরে এন্টনি ফিরিঙ্গি নিজেই গান বাঁধতে পারদর্শী হন।
এন্টনি ফিরিঙ্গি সৌদামিনি নামক এক হিন্দু ব্রাহ্মণ নারীকে সতীদাহ হওয়ার থেকে উদ্ধার করেন ও বিবাহ করেন। তিনি কলকতার দক্ষিণে একটি মা কালিকার মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন, যা ফিরিঙ্গি কালীবাড়ি নামে পরিচিত।
তাঁর একটি বিখ্যাত গান-
‘আমি ভজন সাধন জানি নে মা
নিজে ত ফিরিঙ্গি।
যদি দয়া করে কৃপা কর
হে শিবে মাতঙ্গী।’
9. বঙ্গদর্শন পত্রিকাটি কত সালে প্রথম প্রকাশিত হয়?
'বঙ্গদর্শন' পত্রিকা:
বঙ্গদর্শন মাসিক সাহিত্যপত্রিকা। ১৮৭২ সালে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৮৩৮-১৮৯৪) কর্তৃক এটি প্রথম প্রকাশিত হয়। উনিশ শতকের বাংলা ভাষা ও সাহিত্য, বিশেষত বাংলা গদ্যের গঠনে এর অবদান অবিস্মরণীয়। পত্রিকাটি ১৮৭৬ পর্যন্ত মাত্র চার বছর প্রকাশিত হয়।
সে সময়ে অবিভক্ত বাংলায় কোনো উন্নত মানের সাময়িকপত্র ছিল না। ১২৭৯ বঙ্গাব্দের বৈশাখ থেকে ১২৮২ বঙ্গাব্দের চৈত্র মাস অবধি এর সম্পাদক ছিলেন বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। ১২৮৩ বঙ্গাব্দে এর প্রকাশ স্থগিত থাকে। ১২৮৪ বঙ্গাব্দ থেকে পত্রিকাটি পুনঃপ্রকাশিত হয় সঞ্জীবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের সম্পাদনায়।
শ্রীশচন্দ্র মজুমদার ১২৯০ বঙ্গাব্দের কার্তিক থেকে মাঘ পর্যন্ত ৪টি সংখ্যার সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৩০৮ বঙ্গাব্দ থেকে ১৩১২ বঙ্গাব্দ পর্যন্ত বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সম্পাদনায় বঙ্গদর্শন নবপর্যায়ে ৫ বৎসর প্রকাশিত হয়।
10. শিখা পত্রিকা প্রকাশিত হয় কত সালে?
'শিখা' পত্রিকা:১৯২৬ সালে ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত মুসলিম সাহিত্য-সমাজের মুখপত্র। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি ও বাণিজ্য বিভাগের অধ্যাপক আবুল হুসেন ছিলেন শিখা পত্রিকার প্রথম সংখ্যার সম্পাদক। শিখা বছরে একবার প্রকাশিত হত। প্রথম সংখ্যার প্রকাশকাল চৈত্র ১৩৩৩ (৮ এপ্রিল ১৯২৭)। পৃষ্ঠা সংখ্যা ১৪৪, দাম আট আনা, মুদ্রণ সংখ্যা ১০০০। পত্রিকাটি মুসলিম সাহিত্য-সমাজের পক্ষে আবদুল কাদির কর্তৃক মুসলিম হল থেকে প্রকাশিত এবং মুন্সি আহমদ আলী কর্তৃক সাত রওজার (ঢাকা) ইসলামিয়া প্রেস থেকে মুদ্রিত।
শিখা ১৯২৭ সাল থেকে ১৯৩১ সাল পর্যন্ত বছরে একবার প্রকাশিত হত। এর মোট পাঁচটি সংখ্যার সম্পাদকের নাম নিচে দেয় হলো :
আবুল হুসেন, (১ম সংখ্যা)
কাজী মোতাহার হোসেন, (২য় ও ৩য় সংখ্যা)
মোহাম্মদ আবদুর রশিদ, (৪র্থ সংখ্যা)
আবুল ফজল, (৫ম সংখ্যা)
শিখা ছিল সমকালের অন্যান্য সাময়িকপত্র থেকে সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র ধরনের। তাই প্রথম সংখ্যা প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই পত্রিকাটি বুদ্ধিজীবী সমাজের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। মুসলিম সাহিত্য-সমাজের সারা বছরের কর্মকান্ডের পরিচয় বহন করত শিখা।
শিখার প্রতিটি সংখ্যার শিরোদেশে ‘জ্ঞান যেখানে সীমাবদ্ধ, বুদ্ধি সেখানে আড়ষ্ট, মুক্তি সেখানে অসম্ভব’ কথাটি মুদ্রিত থাকত। এ উক্তিকেই শিখা পত্রিকার লেখকগোষ্ঠী তাদের মটো বা আদর্শবাণী হিসেবে বিবেচনা করত।